রাশিয়াভীতি বাড়ছে ইউরোপে

রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ শুরুর পর ইউরোপে রুশভীতি দেখা দিতে শুরু করে। এই ভয়ের পারদ আরও চড়িয়ে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি আবারও রিপাবলিকান দল থেকে প্রার্থী হতে চান। তিনি মনোনয়ন পাবেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে। তিনি কিছুদিন আগে বলেছিলেন, ‘ন্যাটোর প্রতিরক্ষা ব্যয় বহনে অনিচ্ছুক দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়া যা-ই করুক আমাদের তাতে উৎসাহ দেওয়া উচিত।’

ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে এমন ধারণা এখন প্রবল হচ্ছে যে আজ হোক কাল হোক, রাশিয়াকে তাদেরও মোকাবিলা করতে হবে। জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস জানুয়ারিতে বলেছিলেন, ‘আমাদের এটা বিবেচনায় নিতে হবে যে ভ্লাদিমির পুতিন কোনো একদিন ন্যাটো সদস্যভুক্ত দেশ আক্রমণ করে বসতে পারেন।’ জার্মান টাগেস্পিয়েল সংবাদপত্রকে তিনি ওই কথা বলেন। এর দুই মাস আগে সুইডেনের কমান্ডার ইন চিফ মাইকেল বাইডেন তার দেশের জনগণকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছিলেন। বিবৃতির বিবরণ বিস্তৃত না করেও বলা যায় ইউরোপীয় নেতৃবৃন্দের স্বস্তি কেড়ে নিয়েছে রাশিয়া।

দুটি কারণে রাশিয়া কোনো ন্যাটো রাষ্ট্রকে আক্রমণ করতে পারে। একটি হলোইউক্রেন যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া। এস্তোনিয়ার বিদায়ী সেনা গোয়েন্দা প্রধান মনে করেন, এটা আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে হতে পারে। পোল্যান্ডের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থাও অনুরূপ ধারণা করে। আরেকটি কারণ ন্যাটোর সংহতি চ্যালেঞ্জ করে দেখা যে জোট হিসেবে তারা কতটা ঐক্যবদ্ধ। ন্যাটোর আর্টিকেল ৫-এ বলা হয়েছে, কোনো একটি ন্যাটো দেশের ওপর আক্রমণ পুরো জোটের ওপর আক্রমণ বলেই গণ্য হবে। সরকারের কর্তাব্যক্তিদের এসব কথার প্রতিক্রিয়া জনগণের ওপরও কিছুটা পড়বে এটাই স্বাভাবিক। এক জনমত জরিপে দেখা গেছে, জার্মানির ৮০ ভাগ মানুষ মনে করে তাদের সেনাবাহিনীর আধুনিকায়ন প্রয়োজন। 

প্রশ্ন হলো, রাশিয়া কি আসলেই ইউরোপের আরেকটি দেশ আক্রমণ করবে, এ রকম ধারণার কোনো যথার্থ ভিত্তি আছে কি? তাছাড়া রুশ সংলগ্ন তিন বাল্টিক রাষ্ট্র লিথুয়ানিয়া, এস্তোনিয়া ও লাটভিয়াকে রক্ষা করা ছাড়া ন্যাটোর অগ্রাধিকার তালিকায় আর কী আছে? তা ছাড়া প্রথাগত যুদ্ধের বাইরে রাশিয়া যেভাবে নানা কৌশল প্রয়োগ করে থাকে তা মোকাবিলায় ন্যাটোর কী ধরনের প্রস্তুতি আছে। রাশিয়া কেবল প্রথাগত অস্ত্রই ব্যবহার করে না, পরমাণু হামলার হুমকি, সাইবার হামলা, ভুয়া তথ্য ছড়ানো ও সাবোটাজের মতো বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকে। 

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। এই যুদ্ধের ফলের ওপর রাশিয়ার পরবর্তী পদক্ষেপ অনেকটা নির্ভর করে। সঙ্গত কারণেই ন্যাটোর সামরিক পরিকল্পনাবিদরা সম্ভাব্য বিভিন্ন রকম পরিস্থিতির জন্য হিসাব কষবেন। তবে রাশিয়া কী করবে তা নিশ্চিত হওয়া কঠিন। ধরে নেওয়া যায় কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ বাল্টিক অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি জোরদার করে ন্যাটোর উৎকণ্ঠা বাড়াবে রাশিয়া। ইউরোপের অনেক দেশ ন্যাটো সদস্য হওয়ায় তারা নিজস্ব সামরিক শক্তির উন্নয়নের দিকে তেমন একটা নজর দেয়নি। এসব দেশের সেনাবাহিনী অনেকটা প্রথাগত অস্ত্রনির্ভর। ন্যাটোর প্রধান শক্তি যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র, তাই ন্যাটোর নাকি নিজ নিজ দেশের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানো- কোনটার ওপর জোর দিতে হবে এই নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর রাজনৈতিক ও সামরিক বিশ্লেষকদের মধ্যে বিতর্ক দানা বাঁধছে। কারণ রাশিয়ার সামরিক উচ্চাকাক্সক্ষা যে ইউক্রেনে থেমে যাবে সে ব্যাপারে নিশ্চিত নয় ইউরোপের দেশগুলো।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //